Friday, August 31, 2018

রাসূল (সা:) চোখে দুনিয়া

নবীজি (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন জিবরাঈল (আ.)-কে বললেন, 'আপনি যতোবার আমার নিকট এসেছেন, ততোবারই আপনার কপালে শোক ও দুশ্চিন্তার ছাপ ছিল (এর কারণ কী?)'
.
জিবরাঈল (আ) নবীজি (স)-এর প্রশ্নের জবাবে বললেন, ‘জাহান্নাম সৃষ্টির পর থেকে আমার ঠোঁটে কখনো হাসি ফুটেনি।’ 
.
[রাসূলের চোখে দুনিয়া, হাদীস নং : ১৪০]

Thursday, August 9, 2018

European Union laws require you

European Union laws require you to give European Union visitors information about cookies used and data collected on your blog. In many cases, these laws also require you to obtain consent. 

As a courtesy, we have added a notice on your blog to explain Google's use of certain Blogger and Google cookies, including use of Google Analytics and AdSense cookies, and other data collected by Google. 

You are responsible for confirming this notice actually works for your blog, and that it displays. If you employ other cookies, for example by adding third party features, this notice may not work for you. If you include functionality from other providers there may be extra information collected from your users. 

Learn more about this notice and your responsibilities.

collected from my blog

Thursday, February 22, 2018

সুন্দর মৃত্যুর জন্য

জীবনের সময়টুকুই একজন মানুষের ইহকালীন মূলধন। যদি তা আখেরাতের কল্যাণের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয় তবেই ব্যবসা সফল হবে। আর যদি তা বিনষ্ট করা হয় গুনাহ ও পাপাচারে এবং এ অবস্থায় আল্লাহর সাথে বান্দার সাক্ষাত হয় তাহলে সে হবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই বুদ্ধিমান সে-ই, যে নিজের হিসাব নেয়, আল্লাহ তার কাছ থেকে হিসাব নেওয়ার আগে এবং গুনাহ ও পাপাচার থেকে দূরে থাকে তা তাকে ধ্বংসের পথে নেওয়ার আগেই।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ঈমানদার ব্যক্তি গুনাহকে এমন মনে করে, যেন সে কোনো পাহাড়ের নিচে বসে আছে। আর যে কোনো মুহূর্তে পাহাড়টি তার উপর ধ্বসে পড়তে পারে।-সহীহ বুখারী ১১/৮৯
পক্ষান্তরে অনেক মানুষ এমনও আছে, যারা বেপরোয়াভাবে পাপাচারে লিপ্ত থাকে। সে চিন্তাই করে না, কার অবাধ্যতায় সে লিপ্ত! একপর্যায়ে তার শেষ সময়টি এসে যায় এবং তার মৃত্যু হয়-আল্লাহ হেফাযত করুন-অশুভ মৃত্যু!
হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. বলেন, তোমরা এমন অনেক কাজে লিপ্ত হও, যা তোমাদের দৃষ্টিতে চুলের চেয়ে তুচ্ছ। অথচ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে এগুলোকেই আমরা সংহারক কর্ম বলে গণ্য করতাম।-সহীহ বুখারী ১১/২৮৩
স্বয়ং আল্লাহ তাআলা সুন্দর মৃত্যুর জন্য সতর্ক করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোনো অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করো না।-সূরা আল ইমরান (৩) : ১০২
অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর।-সূরা হিজর (১৫) : ৯৯
সুতরাং তাকওয়া ও ইবাদতের নির্দেশ মৃত্যু অবধি বলবৎ থাকবে, যেন শুভ অবস্থায় মৃত্যু লাভ হয়।
আমল ও ভয়
হাদীস শরীফে একথাও বলা হয়েছে যে, কিছু মানুষ জীবনভর ইবাদত করে এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। কিন্তু মৃত্যুর নিকটবর্তী সময়ে পাপাচারে লিপ্ত হয়। ফলে তার মৃত্যু হয় অশুভ অবস্থায়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ব্যক্তি জান্নাতীদের আমল করতে থাকে, এমনকি তার মাঝে ও জান্নাতের মাঝে শুধু এক হাত দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে। এমন সময় তার তাকদীর অগ্রগামী হয় এবং সে জাহান্নামীদের আমলে লিপ্ত হয়ে যায়। অবশেষে তার ঠিকানা হয় জাহান্নাম।-সহীহ বুখারী ১১/৪১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৬৪৩
সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে এক যুদ্ধে জনৈক ব্যক্তি এত বীরত্বের সাথে লড়াই করছিল যে, সাহাবায়ে কেরাম তা দেখে বিস্ময় বোধ করলেন এবং বললেন, আজ (যুদ্ধের ময়দানে) সে আমাদের যতটা উপকার করেছে আর কেউ তা করতে পারেনি। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তো জাহান্নামী। জনৈক সাহাবী আরজ করলেন, সে যদি জাহান্নামী হয় তাহলে আমাদের মধ্যে আর কে জান্নাতী হবে? একজন বললেন, আমি তার সাথে থাকব এবং দেখব, সে কী করে। তার বর্ণনা- লোকটি লড়াইয়ের একপর্যায়ে মারাত্মকভাবে আহত হল এবং কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য তলোয়ারের অগ্রভাগ বুকে ঠেকিয়ে তার উপর ঝাঁপ দিল এবং আত্মহত্যা করল। এ দৃশ্য দেখে ঐ ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ফিরে এলেন এবং বলতে লাগলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহর রাসূল জিজ্ঞাসা করলেন, কী হয়েছে? তিনি তখন পূর্ণ ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করলেন।
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই মানুষ এমন আমল করে, যা মানুষের দৃষ্টিতে জান্নাতীদের আমল, কিন্তু (আল্লাহর কাছে) সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত। আবার কেউ এমন আমল করে, আপাত দৃষ্টিতে যা জাহান্নামীদের আমল, কিন্তু (আল্লাহর কাছে) সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত।
অন্য রেওয়ায়েতে আরো আছে, সর্বশেষ আমলই প্রকৃত আমল।-সহীহ বুখারী ১১/৪৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১২
আল্লাহ তাআলা ঈমানদার বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন যে, তারা যেমন নেক আমল করে তেমনি আল্লাহ তাআলাকে প্রচন্ড ভয় করে। ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) নিশ্চয়ই যারা তাদের প্রতিপালকের ভয়ে সন্ত্রস্ত, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলিতে ঈমান আনে, যারা তাদের প্রতিপালকের সাথে শরীক করে না এবং যারা তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে-এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করার তা দান করে ভীত-কম্পিত হৃদয়ে তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা এতে অগ্রগামী হয়।- সূরা মুমিনুন (২৩) : ৫৭-৬০
আর এটাই ছিল সাহাবায়ে কেরামের অবস্থা। ইমাম আহমদ রাহ. খলীফায়ে রাশেদ আবু বকর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলতেন, আমি যদি মুমিন বান্দার দেহের একটি চুল হতাম! তিনি তার জিহবা টেনে ধরে বলতেন, এটাই হল ঐ জিনিস, যা আমাকে (বিপদের) ঘাটে অবতীর্ণ করেছে!
খলীফায়ে রাশেদ আলী ইবনে আবী তালিব রা. দুটি জিনিসকে খুব ভয় করতেন : ১. দীর্ঘ আশা ও ২. প্রবৃত্তির অনুসরণ। তিনি বলতেন, দীর্ঘ আশা আখিরাতকে ভুলিয়ে দেয়। আর প্রবৃত্তির অনুসরণ সত্য গ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলতেন, নিশ্চয়ই দুনিয়া দ্রুত বিদায় হচ্ছে আর আখিরাত দ্রুত এগিয়ে আসছে। উভয়েরই রয়েছে কিছু সন্তান। সুতরাং তোমরা আখিরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার সন্তান হয়ো না। সাবধান, আজ শুধু কর্ম, হিসাব নেই। আর আগামীকাল শুধু হিসাব, কর্মের সুযোগ নেই।
অকস্মাৎ মৃত্যু ইসলামে কাম্য নয়। কারণ এটি ব্যক্তিকে কোনো অবকাশ দেয় না। ফলে হতে পারে সে কোনো গুনাহর কাজে লিপ্ত ছিল আর তাওবার আগেই তার মৃত্যু হল।
সালাফে সালেহীন অশুভ মৃত্যুকে খুব ভয় করতেন।

সাহল তাসতারী বলেন, সিদ্দীকগণ প্রতিটি কাজে ও প্রতি মুহূর্তে অশুভ মৃত্যুকে ভয় করেন। তাদের সম্পর্কেই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, তাদের হৃদয় ভীত-কম্পিত।-প্রাগুক্ত : ৬০
মৃত্যু ভালো অবস্থায় হবে কি না, অর্থাৎ ঈমান ও নেক আমলের হালতে মৃত্যু হবে কি না-এই চিন্তা সর্বদা বান্দার মনে থাকা উচিত। কারণ এটাই তাকে নেক আমলে উদ্বুদ্ধ করবে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ভয় করে সে রাতেই গন্তব্যের পানে রওনা হয় আর যে রাতে রওনা হয় সে গন্তব্যে পৌঁছে যায়।
জেনে রেখ, আল্লাহর পণ্য অতি মূল্যবান। জেনে রেখ, আল্লাহর পণ্য হচ্ছে জান্নাত।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৪৫২
মৃত্যুর সময় রহমতের আশা
যখন মৃত্যু নিকটবর্তী হয় তখন আল্লাহর রহমতের আশাই অধিক হওয়া উচিত এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আগ্রহই প্রবল হওয়া উচিত। কারণ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতে আগ্রহী হয় আল্লাহও তার সাক্ষাতে আগ্রহী হন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের প্রত্যেকে যেন শুধু এ অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে যে, সে আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৮৭৭
তবে অনেক মূর্খ মুসলমান আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফিরাতের অর্থ ভুল বোঝে এবং বেপরোয়াভাবে গুনাহয় লিপ্ত হয়; বরং তারা আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফিরাতের গুণ সম্পর্কে জানাকেই অবিরাম গুনাহয় লিপ্ত থাকার কারণ হিসেবে গ্রহণ করে। এটা স্পষ্ট ভ্রান্তি, যা মানুষকে বিপথগামী করে এবং তাকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যায়। কেননা, আল্লাহ তাআলা যেমন গাফুর ও রহীম তেমনি তিনি শাদীদুল ইকাব ও কঠিন শাস্তিদাতাও। কুরআন মজীদের অনেক জায়গায় আল্লাহ এ বিষয়ে সাবধান করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন,  (তরজমা) আমার বান্দাদেরকে বলে দাও, আমি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর আমার শাস্তি-সে অতি মর্মন্তুদ শাস্তি!-সূরা হিজর (১৫) : ৪৯-৫০
অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) হা-মীম। এই কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিকট থেকে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন, তাওবা কবুল করেন। যিনি শাস্তিদানে কঠোর, শক্তিশালী। তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। প্রত্যাবর্তন কেবল তাঁরই নিকট।-সূরা মুমিন (৪০) : ১-৩
মারূফ কারখী রাহ. বলেন, তুমি যার অনুগত নও, তার দয়ার আশা করা তোমার নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছু নয়।
জনৈক আলিম বলেছেন, মাত্র তিন দিরহাম চুরি করার অপরাধে যিনি দুনিয়ায় তোমার একটি অঙ্গ কাটার আদেশ দিয়েছেন আখিরাতে যে তিনি এরূপ শাস্তি দিবেন না-তা তুমি কীভাবে নিশ্চিত হলে?
মুসলিমমাত্রেরই কর্তব্য, মানুষের ঋণ থেকে এবং তাদের প্রতি যে জুলুম সে করেছে তা থেকে দায়মুক্ত হওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। কারণ যার কাছে কারো কোনো প্রাপ্য আছে, কিয়ামতের দিন অবশ্যই তার কাছে তা দাবি করা হবে। অতপর নেকআমল থাকলে তা থেকে ঐ প্রাপ্য পরিশোধ করা হবে। নেক আমল না থাকলে পাওনাদারের গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মানুষের জান/প্রাণ তার ঋণের সাথে বাঁধা থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তা আদায় না করা হয়।
এখানে সংক্ষেপে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হল, যা অশুভ মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকে :
১. তাওবায় বিলম্ব করা
সর্বাবস্থায় সকল গুনাহ থেকে আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা করা প্রত্যেক বালিগ মুসলমানের কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-(তরজমা) হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার।-সূরা নূর : ৩১
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যাঁর পূর্বাপর সবকিছু ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিল তিনিও প্রতিদিন এক শবার আল্লাহ তাআলার নিকট তওবা করতেন।
আগাররুল মুযানী বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা কর। আমি দৈনিক তাঁর নিকট একশ বার তাওবা করি।-সহীহ মুসিলম, হাদীস : ২৭০২
সুনানে ইবনে মাজায় (৪২৫০) হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, গুনাহ থেকে তাওবাকারী ওই ব্যক্তির মতো হয়ে যায়, যার কোনো গুনাহ নেই।
তাওবার বিষয়ে উদাসীন বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইবলিস-শয়তানের একটি কৌশল, যা দ্বারা সে মানুষকে প্রতারিত করে। সে মানুষের মনে এই কুমন্ত্রণ দেয় যে, এখনও অনেক সময় আছে, তাওবা করার অনেক সুযোগ পাওয়া যাবে। এখন তাওবা করে তো তা রক্ষা করা যাবে না। বার বার তাওবা ভাঙ্গলে কি আল্লাহ সে তাওবা কবুল করবেন।
কখনো এই কুমন্ত্রণা দেয় যে, এখন তো জীবন সবে শুরু, যখন বয়স হবে তখন খাঁটি মনে পাকা-পোক্তভাবে তাওবা করে নিও। ঐ সময় মসজিদে পড়ে থাকবে এবং বেশি করে নেক আমল করতে থাকবে। সুতরাং এই বয়সেই ইবাদত-বন্দেগীর পাবন্দি করে কষ্ট না পেয়ে জীবনটা একটু উপভোগ কর।
তো এগুলো হচ্ছে তাওবা থেকে বিরত রাখার জন্য শয়তানের অপকৌশল। এ কারণে সালাফ বলেছেন, তোমাদেরকে ছাওফা (ভবিষ্যতে) শব্দটির বিষয়ে সাবধান করছি। এটা শয়তানের অনেক বড় হাতিয়ার।
সচেতন মুমিন, যে অশুভ অবস্থায় মৃত্যুর ভয়ে ও আল্লাহর মুহববতে প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর নিকট তাওবা করে আর গাফেল মুসলমান, যে অর্থহীন অজুহাতে তাওবাকে বিলম্ব করে তাদের দুজনের দৃষ্টান্ত  হল ঐ যাত্রীদলের মতো, যাদের যেকোনো সময় যাত্রা করতে হবে। তাদের মধ্যে যারা বুদ্ধিমান তারা কষ্ট করে সফরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করল এবং সফরের জন্য প্রস্ত্তত থাকল। আর যারা অলস তারা করছি-করব বলে কোনো প্রস্ত্ততিই গ্রহণ করল না। এরপর হঠাৎ কাফেলার আমীরের পক্ষ থেকে যাত্রার ঘোষণা এল। তখন বুদ্ধিমানরা নিশ্চিন্তে সফর করল আর অলসেরা হায়-হুতাশ করতে লাগল।
আখিরাতের দৃষ্টান্তও অনুরূপ। যখনই মৃত্যু আসুক সচেতন মুমিনের কোনো দুশ্চিন্তা থাকে না। সে তো তাওবা করে গুনাহ থেকে পাকসাফ হয়ে প্রস্ত্তত হয়েই আছে। পক্ষান্তরে পাপীরা বলতে থাকবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে আবার দুনিয়ায় ফিরিয়ে দাও, যেন আমরা সেখান থেকে কিছু নেক আমল নিয়ে আসতে পারি।

নেককার নারীর কিছু গুণ

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) পুরুষ নারীদের অভিভাবক, কারণ আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এ কারণে  যে, পুরুষগণ নিজেদের অর্থসম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং সাধ্বী স্ত্রীগণ অনুগত হয়ে থাকে। পুরুষের অনুপস্থিতিতে আল্লাহর  হিফাজতে (তার অধিকারসমূহ) হেফাযত করে।-সূরা নিসা : ৩৪
উক্ত আয়াতের ভিত্তিতে কুরআনের অন্যান্য আয়াত ও হাদীসের আলোকে সংক্ষেপে নেককার স্ত্রীর কিছু গুণাবলি পেশ করছি।
প্রথম গুণ : উক্ত আয়াতে নেককার নারীর প্রথম গুণ বলা হয়েছে, সতী-সাধ্বী ও দ্বীনদার হওয়া। সালিহাত শব্দের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে জারীর তবারী রাহ. বলেছেন, দ্বীনের সঠিক অনুসারিনী, সৎকর্মশীল নারীগণ।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, পার্থিব জগতটাই হল ক্ষণিক উপভোগের বস্ত্ত। আর পার্থিব জগতের সর্বোত্তম সম্পদ (উপভোগের বস্ত্ত) সাধ্বী নারী।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৬৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৫৬৭; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৪০৩১
হযরত আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো মুমিনের জন্য আল্লাহর তাকওয়া অর্জনের পর নেককার স্ত্রীর চেয়ে কল্যাণকর কিছু নেই। কারণ স্বামী তাকে আদেশ করলে সে আনুগত্য করে, তার দিকে দৃষ্টিপাত করলে সে (স্বামী) মুগ্ধ হয়। তাকে নিয়ে শপথ করলে সে তা (শপথকৃত কর্ম) পূরণ করে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজেকে (অন্যায়-অপকর্ম থেকে) এবং স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ করে।-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৮৫৭
হযরত সাওবান রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সোনা-রূপা সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কোন ধরনের মাল সঞ্চয় করব? তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেই যেন সঞ্চয় করে কৃতজ্ঞ অন্তর, যিকিরকারী মুখ এবং পরকালীন কর্মকান্ডে সহায়তাকারিনী মুমিনা নারী।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৩১০১; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩০৯৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৮৫৬
দ্বিতীয় গুণ : স্বামীর অনুগত ও বিশ্বস্ত হওয়াকে উক্ত আয়াতে নেককার নারীর দ্বিতীয় গুণ বলা হয়েছে।
কানিতাত শব্দের ব্যাখ্যায় হযরত কাতাদাহ রাহ. বলেন, আল্লাহ তাআলা ও স্বামীর অনুগত নারীগণ। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে, রমযান মাসের রোযা রাখবে, নিজ লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে তখন তাকে বলা হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা  জান্নাতে প্রবেশ কর।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৬৬১; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৪১৬৩
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, নারীদের মধ্যে কোন নারী উত্তম। তিনি বললেন, স্বামী যাকে দেখলে আনন্দবোধ করে, যাকে আদেশ করলে আনুগত্য করে, স্ত্রীর বিষয়ে এবং সম্পদের ব্যাপারে স্বামী যা অপছন্দ করে তা থেকে বিরত থাকে।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭৪২১; সুনানে নাসায়ী, কুবরা, হাদীস : ৮৯৬১
তৃতীয় গুণ : উক্ত আয়াতে নেককার নারীর তৃতীয় গুণ বলা হয়েছে, স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার ধন-সম্পদ হেফাযত করবে এবং নিজের সতীত্বের হেফাযত করবে।
আয়াতের এই অংশের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে জারীর তবারী রাহ. বলেন, নারীগণ তাদের স্বামীর অবর্তমানে নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাযত করবে এবং এক্ষেত্রে কোনো ধরনের খেয়ানত করবে না। স্বামীর ধন-সম্পদ সংরক্ষণ করবে। তাদের উপর এ দায়িত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকেই আরোপিত।
এ সম্পর্কিত হাদীস শরীফের বর্ণনা পূর্বোক্ত হাদীসসমূহে উল্লেখ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আরেকটি হাদীস উল্লেখ করছি।
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উত্তম স্ত্রী সে, যার  প্রতি দৃষ্টিপাত করলে তোমাকে আনন্দিত করে, আদেশ করলে আনুগত্য করে, তুমি দূরে থাকলে তার নিজের ব্যাপারে এবং তোমার সম্পদের ব্যাপারে তোমার অধিকার রক্ষা করে। তারপর তিনি কুরআনের উক্ত আয়াত (পুরুষ নারীদের অভিভাবক) তেলাওয়াত করেন।-তাফসীরে তবারী, হাদীস : ৯৩২৯; মুসনাদে ত্বয়ালিসী, হাদীস : ২৩২৫
চতুর্থ গুণ : পবিত্র ও চরিত্রবান হওয়া। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) পবিত্র নারীগন পবিত্র পুরুষদের উপযুক্ত এবং পবিত্র পুরুষগণ পবিত্র নারীদের উপযুক্ত।
এখানে মুমিন নর-নারীর জন্য মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা মানবচরিত্রে স্বাভাবিকভাবে পরস্পরের মাঝে যোগসূত্র রেখেছেন। পবিত্র ও চরিত্রবান নারীদের আগ্রহ পবিত্র ও চরিত্রবান পুরুষদের প্রতি হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে পবিত্র ও চরিত্রবান পুরুষদের আগ্রহ পবিত্র ও চরিত্রবান নারীদের প্রতি হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ আগ্রহ অনুযায়ী জীবনসঙ্গী খোঁজ করে নেয় এবং প্রাকৃতিক বিধান অনুযায়ী সেটাই বাস্তবরূপ লাভ করে। এ জন্য জীবনসঙ্গী ও সঙ্গিনী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলাম দ্বীনদারিকে প্রাধান্য দিতে জোর তাকিদ দিয়েছে।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তিন গুণের যেকোনো একটি গুণের কারণে নারীকে বিবাহ করা হয় : ধন-সম্পদের কারণে, রূপ-সৌন্দর্যের কারণে ও দ্বীনদারির কারণে। তুমি দ্বীনদার ও চরিত্রবানকেই গ্রহণ কর।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৭৪৩৪; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১১৭৬৫; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৪০৩৪
পঞ্চম গুণ : বিবাহের মাধ্যমে চারিত্রিক পবিত্রতা সম্পন্ন হওয়া, গোপনে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনে লিপ্ত না হওয়া। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চারিত্রিক পবিত্রতাসম্পন্ন হবে, ব্যভিচারিনী হবে না এবং গোপনে কোনো অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনকারিনী হবে না।-সূরা নিসা : ২৫
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত ইবনে আববাস রা. বলেন, চারিত্রিক নিষ্কলুষতার অধিকারিনী নারীগণ, যারা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ব্যভিচারিনী হবে না এবং সঙ্গোপনে অবৈধ বন্ধু গ্রহণকারিনী হবে না। তিনি বলেন, জাহেলী যুগে লোকেরা প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়াকে হারাম মনে করত, কিন্তু গোপনে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়াকে হালাল মনে করত। এই প্রেক্ষিতেই আল্লাহ তাআলা কুরআনের আয়াত নাযিল করলেন, তোমরা প্রকাশ্যে হোক, অপ্রকাশ্যে হোক কোনো রকম অশ্লীল কাজের নিকটেও যেও না।-সূরা আনআম : ১৫১; তাফসীরে তবারী, হাদীস : ৯০৯৫, ৯০৭৬, ৪/২২
বর্তমান সমাজে অবৈধ সম্পর্কের ব্যাধি মহামারিতে পরিণত হয়েছে। পর্দাহীনতা, সহশিক্ষা এবং অশ্লীল ফিল্ম ও ছবির বদৌলতে একদিকে অবিবাহিত উঠতি নর-নারী তথাকথিত প্রেমের নামে ভয়ঙ্কররূপে প্রকাশ্য অশ্লীলতায় মেতে উঠছে, অন্যদিকে পরকীয়া প্রেমের কারণে ঘর ভাঙছে অসংখ্য নারীর। তাই মুসলমান নর-নারীরা যতক্ষণ আল্লাহর হুকুম ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে না চলবে ততক্ষণ পারিবারিক শান্তি ও দাম্পত্য জীবনের সুখ খুঁজে পাবে না।
ষষ্ঠ গুণ : দ্বীনদার ও চরিত্রবান হওয়ার সাথে সাথে সরলমতী ও সাদাদিলের অধিকারিনী হওয়া। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) চরিত্রবান, সরলমতী ঈমানদার নারীগণ।-সূরা নূর : ২৩
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে জারীর তবারী রাহ. বলেন, যারা অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অসচেতন (বহু দূরত্বে অবস্থানকারী)।
আল্লামা আলুসী রাহ. বলেন, পবিত্রতার সার্বিক উপাদান নিয়ে বেড়ে উঠা এবং উত্তম চরিত্রের উপর লালিত-পালিত হওয়ার কারণে অন্য কোনো
চিন্তা ও মানসিকতা যাদের কল্পনায় আসে না। এই গুণ পূর্ণ নিষ্কলুষতা ও চারিত্রিক পবিত্রতার প্রমাণ বহন করে, যা শুধু মুহাসানাত (সতী নারী) শব্দের মধ্যে পাওয়া যায় না।-রূহুল মাআনী ৬/১২৬
অন্য কিতাবে বলা হয়েছে, আত্মার ব্যাধিমুক্ত, স্বচ্ছ অন্তরের নারীগণ, যাদের মধ্যে প্রবঞ্চনামূলক চাতুর্য নেই। যাদের স্বভাব-প্রকৃতিতে অসৎ কোনো মনোবাসনা নেই। শৈশবকাল থেকেই এই স্বভাব-সুচরিত্র গড়ে উঠতে সহায়ক হয়।-গারায়েবুল কুরআন ৫/১৭৩
আল্লাহ তাআলা এ ধরনের গুণের অধিকারিনী নারীকে ঈমানদার পরিচয়ে ভূষিত করেছেন।
এই বৈশিষ্ট্যের নারীদের বাইরের জগত সম্পর্কে ধারণা থাকে না, অবৈধ সম্পর্কের কল্পনাও তাদের অন্তরে থাকে না। তারা প্রবঞ্চনা কি জিনিস বুঝেই না। ছল-ছাতুরি জানে না। প্রতারণা ও মিথ্যা বলে না। পর্দাহীনতা ও ফ্যাশন সম্পর্কে চিন্তাও করে না। ফলে তাদের চরিত্র কলুষিত হওয়া ও দ্বীনদারী বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও থাকে না।
সপ্তম গুণ : গৃহে অবস্থান করা। অপ্রয়োজনে বাইরে না যাওয়া। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করো। (পর পুরুষকে) সাজসজ্জা প্রদর্শন করে বেড়িও না। যেমন প্রাচীন জাহেলী যুগে প্রদর্শন করা হত।-সূরা আহযাব : ৩৩
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাছীর রাহ. বলেন, তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থানকে অবধারিত করে নাও। প্রয়োজন ব্যতীত ঘর হতে বের হয়ো না।
এ আয়াতে স্পষ্ট করে মূলনীতি বলা হয়েছে যে, নারীর আসল কাজ তার গৃহে অবস্থান। ঘরোয়া কর্তব্য পালন করা এবং খান্দানকে গড়ে তোলাই তার মূল দায়িত্ব। যেসব তৎপরতা এ দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন ঘটায় তা নারীজীবনের মৌল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। এবং তা দ্বারা সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর অর্থ এমন নয় যে, ঘর থেকে বের হওয়া তার জন্য একদম জায়েয নয়; বরং প্রয়োজনে সে পর্দার সাথে বাইরে যেতে পারবে। তবে বাইরে গমন ও অবস্থান শুধু প্রয়োজনবশত ও প্রয়োজন পরিমাণ হতে হবে। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নারীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আগমন করে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পুরুষরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ ও অন্যান্য মর্যাদায় অগ্রগামী হয়েছেন। আমাদের জন্য কি এমন কোনো আমল রয়েছে যার মাধ্যমে মুজাহিদীনের সমপর্যায়ের মর্যাদা ও সওয়াবের অধিকারী হতে পারব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের থেকে যারা নিজ গৃহে অবস্থান করবে সেটাই তাদেরকে মুজাহিদদের ফযীলত ও সওয়াবে উপনীত করবে।-মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ৬৯৬১; তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩/৭৬৮
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নারী হল আবরণীয়। যখন সে বের হয় শয়তান তার অনুসরণ করে। যখন সে ঘরে আবদ্ধ থাকে তখন আল্লাহর রহমত লাভের অতি নিকটবর্তী থাকে।-মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ২০৬১

সুখী দাম্পত্যের চাবিকাঠি

হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিতরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ইরশাদ করেছেনÑ
خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لأَهْلِي
তোমাদের মাঝে সে সবচে’ ভালোযে তার পরিবারের জন্য ভালো। আর আমি আমার পরিবারের জন্য সবারচে’ ভালো। Ñজামে তিরমিযী ২/২২৮হাদীস ৩৮৯৫সুনানে ইবনে মাজাহহাদীস ১৪২
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিতরাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনÑ
أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا، وَخَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِنِسَائِهِمْ  .
সবচে’ কামিল মুমিন সেযার স্বভাব ও আচরণ সবচে’ ভালো। আর তোমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ সেযে তার স্ত্রীর জন্য শ্রেষ্ঠ। Ñজামে তিরমিযী ১/২১৯হাদীস ১১৬২
ব্যাখ্যা : এ বিষয়ে আরো অনেক হাদীস রয়েছেযা থেকে প্রতীয়মান হয় যেকারো ভালো-মন্দের একটি মাপকাঠি হল স্ত্রীর সাথে তার আচরণ। আল্লাহ তাআলা বৈবাহিক সম্পর্র্ককে মিয়াঁ-বিবি উভয়ের জন্য শান্তি ও পবিত্রতার মাধ্যম বানিয়েছেন এবং এ মধুর সম্পর্ককে তাঁর বিশেষ নিআমতসমূহের মধ্যে গণ্য করেছেন। মিয়াঁ-বিবি উভয়ে যদি একে অপরের হকের বিষয়ে খেয়াল রাখেতাহলে এ সম্পর্কই পুরো পরিবেশকে জান্নাতী পরিবেশে পরিণত করে। পক্ষান্তরে খোদানাখাস্তা এ সম্পর্কে যদি চির ধরে তাহলে পুরো পরিবেশ বিষিয়ে ওঠে এবং জীবনটাই একটা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এতে কেবল পার্থিব সুখ-শান্তিই বিদায় নেয় নাধীরে ধীরে তা দ্বীন ও ঈমানদুনিয়া ও আখেরাত সবকিছুই বরবাদ করে ছাড়ে। আর এ কারণেই শয়তান স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারলে যত পুলকিত হয়অন্য কিছুতেই তত হয় না। সহীহ মুসলিমের একটি হাদীসে আছেÑ
إِنّ إِبْلِيسَ يَضَعُ عَرْشَهُ عَلَى الْمَاءِ، ثُمّ يَبْعَثُ سَرَايَاهُ، فَأَدْنَاهُمْ مِنْهُ مَنْزِلَةً أَعْظَمُهُمْ فِتْنَةً، يَجِيءُ أَحَدُهُمْ فَيَقُولُ: فَعَلْتُ كَذَا وَكَذَا، فَيَقُولُ: مَا صَنَعْتَ شَيْئًا، قَالَ ثُمّ يَجِيءُ أَحَدُهُمْ فَيَقُولُ: مَا تَرَكْتُهُ حَتّى فَرّقْتُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ امْرَأَتِهِ، قَالَ: فَيُدْنِيهِ مِنْهُ وَيَقُولُ: نِعْمَ أَنْتَ.
ইবলিস পানির উপর তার আসন পাতে। তারপর মানুষকে বিপথগামী করার জন্য তার চেলাদের এদিক ওদিক প্রেরণ করে। যে যত বিপথগামী করতে পারেসে তার তত নৈকট্য অর্জন  করে। তো ইবলিস যখন তার পেয়াদাদের কার্যবিবরণী শোনে তখন এক চেলা বলেÑ আজ আমি অমুকের মাধ্যমে এই এই গোনাহ সংঘটিত করেছি। ইবলিস বলেনাহকিছুই করতে পারিসনি। আরেক চেলা বলেআমি অমুকের পিছে লেগেই ছিলাম। তাকে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আর স্ত্রীকে তার বিরুদ্ধে এমনভাবে ক্ষেপিয়ে তুলি যেঅবশেষে এদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে এসেছি। ইবলিস এ শুনে তাকে জড়িয়ে ধরে। বলেশাবাশ! কাজের কাজ তুমিই যা করেছ। Ñসহীহ মুসলিমহাদীস ২৮১৩
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারলে শয়তানের এত আনন্দ কেনকারণ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি ও বিচ্ছেদ শুধু তাদের দুয়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে না। উভয়ের পরিবার-পরিজনআত্মীয়-স্বজনবন্ধু-বান্ধব সবার সম্পর্ককেই তা প্রভাবিত করে। যার কারণে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়।
বৈবাহিক সম্পর্কের এই গুরুত্বের নিরিখে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের যে হেদায়েত দিয়েছেনতা যথাযথ মেনে চললে পরিবারিক অশান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে সীরাত ও সুন্নাহ্র এক গুরুত্বপূর্ণ হেদায়েত হলপরিবার-পরিজনের সাথে সুন্দর ও কোমল ব্যবহার। ঘরের ভেতর আইনের শাসন চলে না। এখানে প্রীতি ও ভালবাসা এবং আখলাক ও ব্যক্তিত্বের প্রভাবই কার্যকর হয়। যারা নিজের ঘরে সামান্য সামান্য বিষয়ে চটে যানহুমকি ধমকি ও রুক্ষতার দ্বারা দাম্পত্যের চাকা সচল রাখতে চানতারা আসলে বিকারগ্রস্ত। সুন্দর ব্যবহার পাওয়া স্ত্রীর সবচে’ বড় হক এবং ঈমানের দাবি।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরোক্ত নির্দেশনা যদিও মৌলিকভাবে পুরুষের উদ্দেশে এবং ঘরে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ গড়ে তোলাও মৌলিকভাবে তারই দায়িত্বতথাপি মুসলিম রমণীগণও এখান থেকে দিকনিদের্শনা গ্রহণ করতে পারেনকরা উচিতও বটে। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঈমানের পূর্ণতায় তিনিই অগ্রগামীযিনি অন্যের চেয়ে ভালো ব্যবহার উপহার দিতে পারেন।
ভালো আখলাকের একটি দিক হচ্ছেনিজের অধিকার তলবের চেয়ে অপরের হক আদায়ে বেশি সচেষ্ট থাকা। কোনো বিষয়ে একজন রেগে গেলে অপরজনও ফুঁসে ওঠবে না। ধৈর্য্য ও কোমলতার সাথে আপোস-মীমাংসা করবে।
আল্লামা আবদুল ওয়াহহাব শারানী রাহ. বলেনএক লোক তার শায়েখের কাছে বিবির মুখরা স্বভাবের অভিযোগ করলে তিনি বললেনস্ত্রীর দেয়া যন্ত্রণা যে সইতে পারে নাসে স্ত্রী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করতে পারে কীভাবে!
তো দাম্পত্য জীবনে হুসনে আখলাক যত কার্যকর থাকবে জীবন যাপনও তত সুখের হবে। মিয়াঁ-বিবির যিনিই হুসনে আখলাকে ভূষিত হবেন তিনিই সুন্দর ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হবেন। বস্তুত ভালো ব্যবহারই ঐ উপায়যা দাম্পত্য জীবনকে শান্তিময় করতে পারে।

(ভাষান্তর : মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর)

এক জান্নাতী সাহাবীর আমল

হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে (মসজিদে নববীতে) উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তিনি বললেন, তোমাদের নিকট এখন একজন জান্নাতী মানুষ আগমন করবে। (বর্ণনাকারী বলেন) অতপর একজন সাহাবী আগমন করলেন। তাঁর দাড়ি থেকে সদ্যকৃত অযুর পানির ফোটা ঝরে পড়ছিল। তিনি তার বাম হাতে জুতা নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করলেন।
তার পরদিনও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে অনুরূপ কথা বললেন এবং প্রথমদিনের মতো সেই সাহাবী আগমন করলেন।
যখন তৃতীয় দিন হল, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই কথা আবার বললেন এবং যথারীতি সেই সাহাবী পূর্বের অবস্থায় আগমন করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আলোচনা শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন তখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রা. সেই সাহাবীর অনুগামী হলেন। তিনি তাকে বললেন, আমি আমার পিতার সাথে ঝগড়া করে শপথ করেছি, তিনদিন পর্যন্ত তার ঘরে যাব না। এই তিনদিন  আমাকে যদি আপনার ঘরে থাকার সুযোগ করে দিতেন, তবে আমি সেখানে থাকতাম। তিনি বললেন, হ্যাঁ,
থাকতে পার।
বর্ণনাকারী হযরত আনাস রা. বলেন, হযরত আবদুল্লাহ রা. বলতেন, তিনি তার সাথে সেখানে সেই তিন রাত অতিবাহিত করলেন। তিনি তাঁকে রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামায পড়তেও দেখলেন না। তবে তিনি যখন ঘুমাতেন, বিছানায় পার্শ্ব পরিবর্তন করতেন তখন আল্লাহর যিকির করতেন। হযরত আবদুল্লাহ রা. বলেন, তার মুখ থেকে কিন্তু ভালো কথা ছাড়া কোনো মন্দ কথা শুনিনি। যখন তিনদিন অতিবাহিত হয়ে গেল এবং তার আমলকে সাধারণ ও মামুলি মনে করতে লাগলাম, তখন তাকে বললাম, হে আল্লাহর বান্দা! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আপনার সম্পর্কে তিনবার একথা বলতে শুনেছি যে, এখনই তোমাদের নিকট একজন জান্নাতী মানুষ আগমন করবে। উক্ত তিনবারই আপনি আগমন করেছেন। তাই আমি ইচ্ছা করেছিলাম আপনি কী আমল করেন তা দেখতে আপনার নিকট থাকব।  যাতে আমিও তা করতে পারি। আপনাকে তো বেশি আমল করতে দেখিনি। তাহলে কোন গুণ আপনাকে এই মহান মর্যাদায় উপনীত করেছে, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন?
তিনি বললেন, তুমি যা দেখেছ, ঐ অতটুকুই। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, যখন আমি ফিরে আসছিলাম তখন তিনি আমাকে ডাকলেন। তারপর বললেন, আমার আমল বলতে ঐ অতটুকুই, যা তুমি দেখেছ। তবে আমি আমার অন্তরে কোনো মুসলমানের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করি না এবং আল্লাহ তাআলা কাউকে কোনো নেয়ামত দান করলে সেজন্য তার প্রতি হিংসা রাখি না।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, এ গুণই আপনাকে এত বড় মর্যাদায় উপনীত করেছে। আর সেটাই আমরা করতে পারি না।-মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ১৯১৮; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮/৭৪; আততারগীব ওয়াত তারহীব ৫/১৭৮
হাদীসের কিছু ফাওয়ায়েদ
উক্ত হাদীসে আগন্তুক জান্নাতী সাহাবীর নাম অনুচ্চারিত হলেও তিনি হলেন বিখ্যাত সাহাবী হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা., যিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ সাহাবীর একজন। এখানে তার ফযীলত ও অনন্য মর্যাদার পাশাপাশি তার বিশেষ একটি গুণ ও অনুপম স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের কথা আলোচনা করা হয়েছে।
উক্ত হাদীসটিতে মুসনাদে আহমদের বর্ণনায় আগন্তুক সাহাবীকে একজন আনছারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।  নিঃসন্দেহে তা পরবর্তী কোনো বর্ণনাকারীর ভুল। কারণ অন্যান্য বর্ণনাসূত্রে স্পষ্টভাবেই হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা.-এর নাম উল্লেখ রয়েছে।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের সম্মুখে এক জান্নাতী সাহাবীর কথা বলে  নেক্কার মানুষের প্রশংসার মাধ্যমে সৎকর্ম ও উত্তম আচরণের প্রতি জোর তাকীদ দিয়েছেন এবং তাদেরকে সেই মহৎ স্বভাব ও বিশেষ গুণ অর্জন করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন।
মুমিনদের করণীয় হলো : মুত্তাকী ও নেক্কার লোকদের আমল আগ্রহ ও মনোযোগের সাথে পর্যবেক্ষণ করা এবং অনুসরণ-অনুকরণের নিমিত্তে সেই গুণ অর্জন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা। প্রয়োজনে তাদের নিকট অবস্থান করে তাদের সান্নিধ্য গ্রহণ করা। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তারা ছিলেন এমন লোক যাদেরকে আল্লাহ হেদায়াত দান করেছেন। সুতরাং তুমিও তাদের পথের অনুসরণ করো।-সূরা আনআম : ৯০
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. এই প্রেরণা থেকেই ঐ সাহাবীর নিকট অবস্থান করেছেন।
আর হাদীসের সেই সুস্পষ্ট বক্তব্য,যা সহজেই বোধগম্য, জান্নাত লাভের অধিকারী নিষ্কলুষ আত্মার ফযীলত।  আত্মশুদ্ধি করা, অন্তরকে পাক-পবিত্র রাখা এবং হিংসা-বিদ্বেষ ও অন্যান্য আত্মার ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখা হচ্ছে এমন একটি গুণ, যা মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতার শীর্ষ চূড়ায় নিয়ে যায়, তথা জান্নাত লাভের উপযোগী বানায়। কারণ, মানুষের অন্তর হল ঈমান-ইখলাস ও তাক্বওয়ার স্থান। সুতরাং কোনো খাঁটি মুমিনের অন্তরে ঈমান-তাক্বওয়া ও হিংসা-বিদ্বেষ কখনো একত্র হতে পারে না। এ জন্যই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আনাস রা.কে বলেছেন, হে বৎস! কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা ব্যতীত তুমি যদি সকাল-সন্ধ্যা অতিবাহিত করতে (জীবন কাটাতে) সক্ষম হও, তাহলে তাই করো।
হিংসা-বিদ্বেষ হল ঈমান-ইসলামের পরিপন্থী এমন অসৎ প্রবণতা, যা মানুষের নেকীকে ধ্বংস করে এবং জান্নাতের পথ হতে দূরে সরিয়ে দেয়। তাছাড়া হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, মানুষ যতক্ষণ হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকবে ততক্ষণ তারা কল্যাণের উপর অবিচল থাকবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পবিত্র হৃদয় দান করুন। আমীন। 

Wednesday, January 24, 2018

বদান্যতার একটি গল্প-মুহাম্মাদ আওয়ামা

ইলমুল মাগাযীর ইমাম ওয়াকেদী রাহ. (মৃত্যু : ২০৭ হি.) বলেন, তখন আমি ইরাকের মন্ত্রী ইয়াহইয়া বিন খালেদ বারমাকীর সঙ্গী ছিলাম।  
একবারের ঘটনা। ঈদের মাত্র কয়েকদিন বাকি। স্ত্রী আমার কাছে এসে বলল, ঈদ এসেই গেল। অথচ আমাদের হাতে কোনো টাকাকড়ি নেই।
আমি আমার এক ব্যবসায়ী বন্ধুর কাছে গেলাম। তাকে আমার প্রয়োজনের কথা খুলে বলে কিছু দিরহাম চাইলাম। সে মোহর কচুরা একটি থলে বের করে দিল। সেখানে ছিল এক হাজার দুইশ দিরহাম।
আমি থলেটি নিয়ে বাড়িতে এলাম। বাড়িতে এসে তখনও আমি স্থির হয়ে বসতে পারিনি, ইতিমধ্যে আমার এক হাশেমী বন্ধু এল। আর কি আশ্চর্য! সে তার ফসল ঘরে তোলায় বিলম্বের কথা জানিয়ে আমার কাছে কিছু দিরহাম ধার চাইল।
ঘরের অন্দরে গিয়ে স্ত্রীকে পুরো অবস্থা জানালাম। স্ত্রী বলল, এখন তোমার কি ইচ্ছা? বললাম, ভাবছি, থলেটির অর্ধেক দিরহাম তাকে দিয়ে দেব।
স্ত্রী বলল, একি বলছ তুমি! একজন সাধারণ মানুষের কাছে তুমি গিয়েছিল সে তোমাকে এক হাজার দুইশ দিরহাম দিয়ে দিতে পারল! আর তোমার কাছে এসেছে এমন একজন মানুষ, যার রয়েছে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে  নৈকট্য ও আত্মীয়তার বন্ধন। আর তুমি কি না এমন মানুষকে এর অর্ধেক দিবে! না, তা হয় না; বরং তাঁকে পুরো থলেটিই    দিয়ে দাও।
ইমাম ওয়াকেদী রাহ. বলেন, আমি থলেটি বের করে তাকে দিয়ে দিলাম। আমার করজদাতা ব্যবসায়ী ও এই হাশেমীর মাঝে বন্ধুত্ব ছিল।
আমার ঐ ব্যবসায়ী বন্ধু গেল ঐ হাশেমী বন্ধুর কাছে। আর কি আশ্চর্য! সেও নিজের প্রয়োজন তুলে ধরে হাশেমী বন্ধুর কাছে কিছু দিরহাম ধার চাইল।
হাশেমী বন্ধু ঘরে গিয়ে ঐ থলেটি বের করে দিল! থলেটি দেখেই চিনে ফেলল ব্যবসায়ী বন্ধু! সে পুনরায় আমার কাছে এসে পুরো বৃত্তান্ত জানাল।
ততদিনে আমার কাছে এল মন্ত্রী ইয়াহইয়া ইবনে খালিদের দূত। তিনি দূত মারফত আমাকে ডেকে পাঠিয়ে জানালেন, আমীরুল মুমিনের কিছু কাজে ব্যস্ত থাকায় দূত পাঠাতে দেরি হয়ে গেল।
আমি দূতের সাথে বাহনে সওয়ার হলাম। মন্ত্রীর কাছে আমি কথায় কথায় থলেটির এই অভূতপূর্ব বৃত্তান্ত জানালাম। শুনে তিনি গোলামকে বললেন, যাও ঐ দিনারগুলো নিয়ে এস। সে দশ হাজার দিনার নিয়ে এল।
ইয়াহইয়া ইবনে খালিদ বারমাকী আমাকে বললেন, তুমি নাও দুই হাজার দিনার। দুই হাজার দিনার তোমার ব্যবসায়ী বন্ধুর, দুই হাজার হাশেমী বন্ধুর জন্য। আর বাকি চার হাজার দিনার হল তোমার স্ত্রীর জন্য। কারণ সে তোমাদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে।
(সূত্র : তারীখে বাগদাদ ৩/১৯-২০)
-ইবনে দানিশ